ডাল্টনের পরমাণুবাদ(Daltons atomic theory).

ডাল্টনের পরমাণুবাদ(Daltons atomic theory).



1803 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন পরমাণুর ধর্ম ও ভর এবং বিভিন্ন মৌলের পরমাণু সমূহের পরস্পরের মধ্যে সংযোগ দ্বারা যৌগ গঠনের অবস্থা সম্পর্কে একটি মতবাদ প্রকাশ করেন। যা ডালটনের পরমাণুবাদ নামে পরিচিত।

 

ডাল্টনের পরমাণুবাদের স্বীকার্য সমূহঃ

১. প্রতিটি পদার্থ পরমাণু নামক অসংখ্য ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। তিনি মৌলের ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন সরল পরমাণু এবং যৌগের ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন যৌগিক পরমাণু।

২. পরমাণুসমূহ অবিভাজ্য। এদের সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। 

৩. একই পদার্থের সকল পরমাণুর ধর্ম ও ভর অভিন্ন।

৪. বিভিন্ন পদার্থের পরমাণুর ধর্ম ও ভর বিভিন্ন।

৫. পরমাণুসমূহ পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে।

৬. কেবল পরমাণুসমূহ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

৭. রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোন পরমাণু সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। শুধু তাদের মধ্যকার সংযোগের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে।

৮. একই মৌলসমূহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের পরমাণুর সংখ্যার বিভিন্ন অনুপাতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন যৌগ গঠন করে। 

যেমনঃ একটি সালফার পরমাণুর সাথে দুটি অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে সালফার ডাই অক্সাইড (SO₂) গঠন করে। আবার একটি সালফার পরমাণুর সাথে তিনটি অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে সালফার ট্রাই অক্সাইড(SO₃) গঠন করে।


ডাল্টনের পরমাণুবাদের সীমাবদ্ধতাঃ

ডাল্টনের পরমাণুবাদ আধুনিক রসায়নের ভিত্তি। এই মতবাদ রাসায়নিক সংযোগ সূত্র গুলিকে ব্যাখ্যা করতে পারে। এছাড়া পদার্থের গঠন সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা ডাল্টনের পরমাণুবাদ থেকে পাওয়া যায়। এসব সাফল্যের পরও এ মতবাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যা নিচে উল্লেখ করা হলো-

১. ডাল্টনের মতবাদে পরমাণুসমূহকে অবিভাজ্য বলা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে পরমাণু ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত। এছাড়া পরমাণুতে কিছু ভারী কণার উপস্হিতিও লক্ষ্য করা যায়।

২. ডাল্টনের মতবাদে অণু ও পরমাণুর মধ্যে কোন পার্থক্য দেখানো হয়নি। শুধু মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাকে সরল পরমাণু এবং যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাকে যৌগিক পরমাণু বলা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাকে 'পরমাণু' এবং যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাকে 'অনু' বলা হয়েছে।

৩. এ মতবাদে একই মৌলের সকল পরমাণুর ধর্ম ও ভর অভিন্ন বলা হয়েছে। কিন্তু আইসোটোপ আবিষ্কারের পর দেখা গেছে একই মৌলের বিভিন্ন ভরযুক্ত পরমাণু হতে পারে। যেমনঃ কার্বনের বিভিন্ন ভরযুক্ত পরমাণু হচ্ছে ¹²C ; ¹³C ; ¹⁴C যারা পরস্পরের আইসোটোপ।

৪. ডাল্টনের মতবাদে বিভিন্ন মৌলের পরমাণুসমূহের ধর্ম ও ভর বিভিন্ন বলা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে একই পারমাণবিক ভর বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর হতে পারে। যেমনঃ জিংক ও কপার উভয়ের ভর 64 ( ⁶⁴Cu ; ⁶⁴Zn) হতে পারে। এদেরকে পরস্পরের আইসোবার বলে।

৫. এ মতবাদে বলা হয়েছে যে শুধু পরমাণুসমূহ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এটি সঠিক নয়। কারণ, সম্পূর্ণ পরমাণু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। শুধু পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন গুলিই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।


ডাল্টনের পরমাণুবাদের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তাঃ

১. ডাল্টনের পরমাণুবাদের সাহায্যে রাসায়নিক সংযোগ সূত্রগুলি প্রমাণ করা যায়।

২. বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুর সাহায্যে বিভিন্ন যৌগিক পদার্থের গঠন ব্যাখ্যা করা যায়।

৩. এ মতবাদ অনুসারে একই মৌলের সকল পরমাণুর ধর্ম ও ভর অভিন্ন বলা হয়েছে। যা রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহকে সমীকরণের সাহায্যে সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।

৪. ডাল্টনের পরমাণুবাদ অ্যাভোগেড্রোর প্রকল্পের ভিত্তি। এই মতবাদই অ্যাভোগেড্রোকে অনুর ধারণা দিতে সাহায্য করেছে। 

৫. ডাল্টনের পরমাণুবাদ ও অ্যাভোগেড্রোর প্রকল্পের উপর নির্ভর করে সমস্ত রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি ব্যাখ্যা করা যায়।

Comments

Popular posts from this blog

কপার(Cu) ও ক্রোমিয়ামের(Cr) ইলেকট্রন বিন্যাস ব্যতিক্রম কেন?

মুক্তজোড় ইলেকট্রন ও বন্ধন জোড় ইলেকট্রন কাকে বলে।

জারণ সংখ্যা নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি।

COD ও BOD কাকে বলে?

জারক ও বিজারক কাকে বলে? কিভাবে জারক ও বিজারক সহজেই চেনা যায়।

সালফার পরিবর্তনশীল যোজনী প্রদর্শন করে কেন?

প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড ও সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ কাকে বলে?

মোলার গ্যাস ধ্রুবক এবং এর মাত্রা, তাৎপর্য ও মান নির্ণয়।

প্রতীক ও সংকেতের মধ্যে পার্থক্য কি?

রাদারফোর্ড ও বোর পরমাণু মডেলের মধ্যে তুলনা।