আকরিক থেকে লোহা নিষ্কাশন।

আকরিক থেকে লোহা নিষ্কাশন। 





খনি থেকে লৌহ আকরিক সংগ্রহ করে ধুলাবালি, কাদামাটি পরিষ্কার করা হয়। 
এরপর দুই ধাপে 
১.আকরিকের তাপজারণ বা ভস্মীকরণ এবং
২. বিগলন বা কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে লোহা নিষ্কাশন করা হয়। 


ভস্মীকরণঃ লোহার আকরিকের সাথে কার্বন মিশ্রিত করে পোড়ানো হয়। ফলে আকরিকের পানি বাষ্প, সালফার, আর্সেনিক ও অন্যান্য পদার্থগুলি যৌগ রূপে আলাদা হয়। এছাড়া কার্বনেট আকরিক বিয়োজিত হয়ে ফেরাস অক্সাইড এবং ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয়। এই ভস্মীভূত আকরিককে বাত্যাচুল্লির ভেতরে হপার এর মাধ্যমে আকরিক, কোক কার্বন ও চুনা পাথরের মিশ্রণকে ৮:৪:১ ওজন অনুপাতে যোগ করা হয়। 

FeCO₃ -----> FeO + CO₂
4FeO + O₂ -----> 2Fe₂O₃

বাত্যাচুল্লির নিচ দিয়ে গরম বাতাস চুল্লিতে প্রবেশ করানো হয়। এতে করে কোক কার্বন চুল্লির টাওয়ারের মুখে বাতাসের ঝাপটায় প্রজ্বলিত হয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। এইজন্য চুল্লীর নিচের দিকে তাপমাত্রা 1500 ডিগ্রী সেলসিয়াস এর অধিক হয়ে থাকে। আবার এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড কার্বন দ্বারা বিজারিত হয় কার্বন মনো অক্সাইড উৎপন্ন করে। 

C + O₂ ------> CO₂
CO₂ + C ------> 2CO


বাত্যাচুল্লির বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন তাপমাত্রায় রাসায়নিক পরিবর্তন সমূহ নিম্নরূপঃ 

১. চুল্লীর উপরের অংশ বা স্টক কলামে প্রায় 400 থেকে 900 ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আয়রন অক্সাইড সমূহ ঊর্ধ্বগামী কার্বন-মনোক্সাইড দ্বারা বিজারিত হয় ধাতব আয়রনে পরিণত হয়।

Fe₂O₃ + 3CO -----> 2Fe + 3CO₂
Fe₃O₄ + 4CO -----> 3Fe +4CO₂

২. চুল্লির মধ্যভাগে বা বসের সামান্য উপরে প্রায় 900 থেকে 1000 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চুল্লীর মধ্যস্থ চুনাপাথর বিয়োজিত হয়ে ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে। উৎপন্ন চুন সিলিকার সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম সিলিকেট ধাতুমল উৎপন্ন করে।

CaCO₃ ------> CaO + CO₂
CaO + SiO₂ -----> CaSiO₃

৩.  চুল্লীর নিচের অংশ বা বস এর নিকট প্রায় 1300 থেকে 1500 ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আকরিকের অধিক স্থায়ী খনিজমল যেমনঃ ক্যালসিয়াম ফসফেট, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইডসমূহ ও কিছু পরিমাণ সিলিকা তাপ বিয়োজিত বা কার্বন দ্বারা বিজারিত হয় ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও সিলিকন উৎপন্ন করে। কিছু সিলিকা চুনের সাথে ক্যালসিয়াম সিলিকেট ধাতুমল উৎপন্ন করে। 

Ca₃(PO₄)₂ ----> 3CaO + P₂O₅
P₂O₅ + 5C -----> 2P + 5CO
Mn₂O₃ + 3C -----> 2Mn + 3CO
SiO₂ + 2C -----> Si + 2CO
MnO₂ + 2C -----> Mn + 2CO
CaO + SiO₂ -----> CaSiO₃

এই ধাতুমল গুলি নির্গমন নল দিয়ে বের করে নেয়া হয়। সেই সাথে অন্য আরেকটি নল দিয়ে গলিত লোহা বের করে নেওয়া হয়। 
এই লোহাকে কাস্ট আয়রন বা ঢালাই লোহা বলে।

Comments

Popular posts from this blog

কপার(Cu) ও ক্রোমিয়ামের(Cr) ইলেকট্রন বিন্যাস ব্যতিক্রম কেন?

মুক্তজোড় ইলেকট্রন ও বন্ধন জোড় ইলেকট্রন কাকে বলে।

জারণ সংখ্যা নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি।

COD ও BOD কাকে বলে?

জারক ও বিজারক কাকে বলে? কিভাবে জারক ও বিজারক সহজেই চেনা যায়।

সালফার পরিবর্তনশীল যোজনী প্রদর্শন করে কেন?

প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড ও সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ কাকে বলে?

মোলার গ্যাস ধ্রুবক এবং এর মাত্রা, তাৎপর্য ও মান নির্ণয়।

প্রতীক ও সংকেতের মধ্যে পার্থক্য কি?

রাদারফোর্ড ও বোর পরমাণু মডেলের মধ্যে তুলনা।